ময়মনসিংহের ভালুকায় বিগত আওয়ামী দুঃশাসনামলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জনৈক তরিফ উল্লাহ একই জমি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির কাছে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। প্রতারণা ধরা পড়ায় নানা ভয়ভীতি ও বিভিন্ন মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন ক্রেতাদের। গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগের পতনের পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে তার প্রতারণার কাহিনী।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের সীডস্টোর বাজার (বারশ্রী) এলাকার মৃত আবু সাঈদের ছেলে মোঃ তরিফ উল্যাহ আওয়ামী দুঃশাসনামলে তার ছেলে নাঈম হাসান ডালিম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর সহযোগিতায় অসহায় মানুষের জমি জবর দখল, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি সহ অপকর্মের শীর্ষে ছিলো। তার নানা অপকর্মকে সমর্থন দিয়ে নিজেও হয়েছেন বেপরোয়া। বাপ ছেলে মিলে অন্যের জমি অবৈধ দখলদারিত্বে মেতে ওঠে এই দখল দারিত্বের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সরকারি খাস জমিও। গনঅভ্যুত্থানের পর থেকেই তরিফ উল্লাহর ছেলে ডালিম পলাতক রয়েছেন। তৎকালিন সময়ে তরিফ উল্লাহর ছেলের দাপটে কেউ মুখ খোলেনি। তরিফ উল্লাহ তার ছেলে ডালিম ও তার চাচা আবুল কাশেমকে খুটি হিসেবে ব্যবহার করে জালদলিল তৈরি করে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
দালিলিক তথ্যে জানা যায়, ২০১৫ সালে ৪৭১ দাগে ৭২৮২ নং দলিলের মাধ্যমে সাড়ে ১০বিঘা, একই দাগে ৭২৮৩নং দলিলের মাধ্যমে সাড়ে ১০বিঘা, ৭২৮৪নং দলিলের মাধ্যমে ৬ বিঘা এবং ৪৩৮নং দাগে ৭৩৩৫ নং দলিলের মাধ্যমে ১২বিঘা সহ আরও কয়েকটি দলিলের মাধ্যমে ৩৯ বিঘা জমি বিক্রি করেছেন এরশাদ গ্রুপের কাছে। সেই দলিল মর্গেজ (দলিল নং-৮৩০০) তারিখ-০২/১০/১৬ ইং দিয়ে এরশাদ গ্রুপ এবি ব্যাংক কাকরাইল শাখা থেকে ৩৬ কোটি টাকা লোনও করেছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
এর আগে একই জমি দেখিয়ে জনৈক বাবুলের কাছ থেকে ১০লাখ টাকা নিয়েছে ২০১২ সালে, পরে বাবুলকে টাকা ও জমি কোনোটিই ফেরৎ দেন নি। এই বিষয়ে বাবুল বলেন ৪৭১ দাগের ১০ একর জমি তার কাছে ২০১২ সালে তরিফ উল্লাহ বিক্রি করার কথা বলে চেকের মাধ্যমে ১০লাখ টাকা নেন, অদ্যাবদি সেই জমি বুঝিয়ে দেননি এবং টাকাও ফেরৎ দেননি, টাকা চাইতে গেলেই উল্টু তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান তরিফ উল্লাহর চাচা আবুল কাশেম ও তার ছেলে নাঈম হাসান ডালিম। তিনি আরও বলেন ওই তরিফ উল্লাহ জাল দলিল তৈরি চক্রের সদস্য।
২০১৮সালে ৪৭১দাগের একই জমি ৩৩২৮নং দলিলের মাধ্যমে সাড়ে ৩২ বিঘা ও ৫৫৬ দাগে দেড় বিঘা সহ মোট ৩৪ বিঘা জমি জনৈক ঢাকার এক শিল্পপতি সাইফুল ইসলামের নিকট প্রতারণা করে বিক্রি করেন। টাকা নেওয়ার পর বিক্রয়কৃত সম্পূর্ণ জমি বুজিয়ে না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকে। পরে সাইফুলের ভোগ দখলে থাকা ৪৭১ দাগে রেকর্ডিয় ০২ একর ৩২ শতাংশ জমি বিক্রি করেন মাহমুদুল হাসান মুরাদের কাছে।
সাইফুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি শুধু এটুকুই বলতে চাই তরিফ উল্লাহ আমার কাছ থেকে যা টাকা নিয়েছে তার সমপরিমাণ জমি বুজিয়ে দেয়নি তাই ওই বিষয়ে গত ২৩-১০-২০২৪ ইং তারিখে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগও দিয়েছি।
প্রতারক তরিফ উল্ল্যাহ তার চাচা আবুল কাশেমের দিকনির্দেশনায় ১৫৮ সরকারি খাস খতিয়ানের ১০ একর, ১৪৮ খতিয়ানের ৭একর ৮শতাংশ জমি ভুয়া পাওয়ার অফ এর্টনি নিয়ে ২০১৭ সালে ২৭৩৪নং দলিলের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেও হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। তার এসব ভূয়া দলিলের মাধ্যমে স্থানীয় ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগ সাজসে জাল খারিজ করে বিক্রেতাদের বিস্বস্ততা অর্জন করে। যার কারণে একাধিক ব্যক্তি তার প্রতারণা ফাঁদে পা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হারিয়েছে। তার প্রতারণার মাধ্যমে জমি বেচা কেনার বিষয়টি জানাজানি হলে সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরই জের হিসেবে মুরাদের পিতা আলহাজ্ব শহিদুল ইসলামের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, আমরা তরিফ উল্ল্যাহর জমি জবর দখল সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি ভূমি অফিসের মাধ্যমে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম বলেন ওই তরিফ উল্লাহর কাজই হচ্ছে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জমির দলিল সৃজন করে সরকারি খাস জমি, বনভূমি দেখিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। একই জমি দেখিয়ে একাধিক কোম্পানির মালিকের কাছথেকে টাকা নিয়েছে এবং কাউকেই সঠিক জমি বুজিয়ে দিতে পারেনি টাকাও ফেরৎ দেননি।
এই বিষয়ে তরিফ উল্লাহ জানান, আমি এরশাদ গ্রুপ কিংবা হাজ্বী শহিদ সহ কারো কাছে জমি বিক্রি করিনি, আমার জমি তারা জবর দখল করেছে তবে সাইফুল ইসলাম আর আমি একটি পাওয়ার নামা দলিল করেছিলাম ব্যাংকের লোন নেওয়ার জন্য এবং ব্যাংকের লোন না হওয়ায় গত বছর পাওয়ার নামাটি ভাঙ্গার জন্য কোর্টে মামলা করলে গত ২৪-১০-২০২৪ তারিখ পাওয়ার নামা দলিলটি ভেঙ্গে যায় এবং আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমি যে কয়টি জমি বিক্রি করেছি সবগুলো মালিককে জমি বুঝিয়ে দিয়েছি এবং সবগুলো দলিলই খাজনা খারিজ করা আছে।
© ২০২২ - ২০২৪ সমবানী কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত