বরগুনার পাথরঘাটার সাবেক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা টিএম শাহ্ আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। টিএম শাহ্ আলম পাথরঘাটায় থাকাকালীন সময় তার বিরুদ্ধে অর্থ আদায়, অনিয়ম-দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, বদলী বাণিজ্য ও শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, শিক্ষকদের আক্রোশমূলক বদলি সহ ব্যাপক অভিযোগ উঠে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ. মো. আক্তারুজ্জামানকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে। আগামী (২৩ অক্টোবর) পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে। তদন্ত কর্মকর্তা শেখ. মো. আক্তারুজ্জামান সাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শিক্ষা কর্মকর্তা টিএম শাহ্ আলম পাথরঘাটা থাকাকালীন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। ফলে একজন সরকারের প্রভাবশালী কর্মচারীতে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এই কর্মকর্তা (সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধি) ভুলে গিয়ে বিভিন্ন সময় তার ফেইসবুক আইডিতে সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে নানা রকম পোস্ট করতেন। তার অধিনস্ত কর্মকর্তা-শিক্ষকদের গোয়েন্দা সংস্থার নামে ভয়ভীতি দেখাতেন। তার এসব কর্মকান্ড দেখে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেন না।
তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে পাথরঘাটা থেকে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় বদলী করা হয়। তখন স্থানীয় সাবেক সাংসদকে দিয়ে তদবির করিয়ে ১৯ জুলাই পুণরায় পাথরঘাটায় যোগদান করেন। এরপর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে তাকে আবারও খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় বদলী করা হয়। বর্তমানে তিনি খুলনার দিঘলিয়া কর্মরত আছেন।
এ বিষয় পাথরঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছগির হোসেন বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা টিএম শাহ্ আলম বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। আওয়ামীলীগের সাবেক এমপির দোয়াই দিয়ে আমাকে সহ অনেক শিক্ষককে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেছেন।পাথরঘাটা পৌর বিএনপির সদস্যসচিব মোহাম্মাদ ইসমাইল শিকদার (এসমে) বলেন, পাথরঘাটার সাবেক এই শিক্ষা কর্মকর্তা টিএম শাহ্ আলম আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কাউকে পরোয়া করতেন না।
তার অভিযোগগুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত।এবিষয়ে অভিযোগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জানতে পেরেছি তদন্তে বিশৃঙ্খলা ও সুষ্ঠুভাবে যাতে তদন্ত না হয় এজন্য টিএম শাহ আলম তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের দিয়ে তদন্তের দিন হট্টোগোল সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার সাথে সাবেক এই শিক্ষা কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তদন্তের দিন শাহআলমের অনুসারী শিক্ষকদের রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন। এতে তদন্ত সুষ্ঠু না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এ বিষয় তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, পাথরঘাটার সাবেক শিক্ষা অফিসার টিএম শাহ্ আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগের তদন্তে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে অধিদপ্তর। তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
© ২০২২ - ২০২৪ সমবানী কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত